শুক্রবার ২৮ নভেম্বর ২০২৫ - ১৯:৩৮
ফাখরিজাদে: ইরানি বিজ্ঞানীদের জন্য বৈজ্ঞানিক জিহাদের অনন্য আদর্শ

শহীদ বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে’কে সম্মান জানিয়ে ইরান আজ ২৮ নভেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে “ইরানি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি দিবস” ঘোষণা করেছে। এমন একজন বিজ্ঞানী, যিনি বহু বছর ধরে সন্ত্রাসী হামলার টার্গেট ছিলেন এবং যিনি দৃঢ় কণ্ঠে বলেছিলেন— “আমি যত বেশি কাজ করি, নেতানিয়াহুর ঘুম তত কমে যায়।”

হাওজা নিউজ এজেন্সি: শহীদ বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদের শাহাদাতবার্ষিকীর এই দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে সত্যিকারের উন্নয়ন ও জাতীয় স্বাধীনতার ভিত্তি নিহিত আছে অবিচল বৈজ্ঞানিক জিহাদে, যার অনন্য উদাহরণ ছিলেন মোহসেন ফাখরিজাদে।

বিজ্ঞান, আত্মনির্ভরতা ও প্রতিরোধ—ফাখরিজাদে’র আদর্শ
আজকের এই দিনে দেশটি শুধু একজন মেধাবী বিজ্ঞানীকেই স্মরণ করছে না, বরং তাঁর আদর্শও—প্রতিরোধ, আত্মনির্ভরতা, ঈমান ও গভীর দেশপ্রেম।

১৯৬১ সালে পবিত্র শহর ক্বোমে জন্মগ্রহণকারী ফাখরিজাদে ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর শাহাদাতবরণ করেন। মাত্র ৫০ বছর বয়সেই তিনি এমন একটি বৈজ্ঞানিক উত্তরাধিকার রেখে গেছেন যা ইরানের কৌশলগত অগ্রগতির ইতিহাসে স্থায়ী হয়ে গেছে। তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি রাহবার আয়াতুল্লাহ সাইয়্যেদ আলী খামেনেয়ীর পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয়-স্তরের সেবা–পদক লাভ করেন।

তাঁর জীবন ছিল ইরানের বৈজ্ঞানিক দৃঢ়তা, জাতীয় আত্মমর্যাদা এবং স্বাধীনতার পথে সংগ্রাম–এর জীবন্ত কাহিনি। তিনি বিজ্ঞানকে দেখতেন আল্লাহর পথে সংগ্রাম—জিহাদ হিসেবে; যার উদ্দেশ্য ছিল দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা, বহিঃশক্তির চাপ মোকাবিলা এবং বৈশ্বিক বিজ্ঞান মঞ্চে ইরানের মর্যাদা বৃদ্ধি।

বিজ্ঞান ও ঈমানের সমন্বয়ে জাতীয় উন্নয়নের পথিকৃৎ
যদিও তাঁর ডক্টরেট ছিল রাষ্ট্রবিজ্ঞানে, প্রকৃত দক্ষতা ও গভীরতম গবেষণা ছিল—
• পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান
• বায়োটেকনোলজি
—যা ইরানের কৌশলগত ও উন্নয়নমূলক পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু।

জাতীয় দায়িত্ববোধে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি দ্রুতই প্রতিরক্ষা গবেষণা ও প্রযুক্তি–অঙ্গনে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হন। তিনি বিশ্বাস করতেন— “বিজ্ঞান আর ঈমান—দু’টিই স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যাওয়ার মূল শক্তি।”

প্রতিরক্ষা গবেষণায় তাঁর বিস্তৃত অবদান ইরানের—
• পারমাণবিক প্রযুক্তি
• চিকিৎসা–বিজ্ঞান
• উন্নত উপকরণ প্রযুক্তির
ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করে।

উদ্ভাবন ও অগ্রগতিতে তাঁর বহুমাত্রিক ভূমিকা
ফাখরিজাদে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল— প্রতিরক্ষা উদ্ভাবন ও গবেষণা সংস্থার (SPND) প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন।

তাঁর নেতৃত্বে ইরান এগিয়ে যায়—
• দেশীয় কোভিড–১৯ ভ্যাকসিন উন্নয়নে
• ন্যানো প্রযুক্তির নতুন গবেষণা
• নিউক্লিয়ার মেডিসিন ও বায়োটেকনোলজিতে নতুন দিগন্ত

তিনি দেখিয়েছেন—বৈজ্ঞানিক জিহাদ মানে জ্ঞান, ঈমান ও কর্মের সমন্বিত প্রয়াসে জাতীয় অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করা।

সহকর্মীরা তাঁকে দেখেছেন—অত্যন্ত বিনয়ী, নিবেদিত, এবং নিরলস পরিশ্রমী একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। রাতের গভীরতাতেও তাঁকে গবেষণাগারে পাওয়া যেত, কারণ তাঁর বিশ্বাস ছিল— “অহংকার ও বাহ্যিক হুমকির সামনে দাঁড়ানোর শক্তি হলো বিজ্ঞান।”

২০১৯ সালে রাষ্ট্রীয় দ্বিতীয়–স্তরের সেবা–পদক পেয়ে তিনি স্বীকৃতি পান ইরানে বৈজ্ঞানিক জিহাদের পথিকৃৎ হিসেবে।

কেন তিনি ছিলেন শত্রুদের প্রধান লক্ষ্যবস্তু?
দীর্ঘদিন গোপনে কাজ করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার পর ২০২০ সালে তাঁকে সন্ত্রাসী হামলায় লক্ষ্যবস্তু করা হয়। কারণ স্পষ্ট— তিনি নিজেই একবার স্ত্রীকে বলেছিলেন, “আমি যত বেশি কাজ করি, নেতানিয়াহুর রাতের ঘুম তত কম হয়।”

যদিও তিনি সাধারণ জনগণের কাছে খুব বেশি পরিচিত ছিলেন না, শত্রুরা—বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—তাঁর গুরুত্ব ও প্রভাব অত্যন্ত ভালোভাবেই জানত।

দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তাঁর নাম ছিল সন্ত্রাসী হিট–লিস্টে, এবং বহু বছর ধরে তাঁকে জায়নিস্টদের প্রধান টার্গেট হিসেবে গণ্য করা হতো।

এমনকি মার্কিন সাময়িকী ফরেন পলিসি তাঁকে বিশ্বের ৫০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় স্থান দিয়েছিল—মাত্র পাঁচজন ইরানির অন্যতম ছিলেন তিনি।

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha